নীরোগ দেহের জন্য Yoga আজ থেকে বহু বৎসর পূর্বে সুশ্রুত, চরক, জীবক প্রভৃতি চিকিৎসকগণ রোগীর চিকিৎসা আরম্ভ করেন। এরা প্রধানতঃ গাছ-গাছড়ার সাহায্যে রোগ সারাতেন। আবার পতঞ্জলি, থেরগু প্রভৃতি চিকিৎসকগণ দেহের ভিতরকার শিরা উপশিরা গ্রন্থি প্রভৃতির চিকিৎসা এবং দীর্ঘদিনকর্মক্ষম করে রাখার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। এঁরা সবাই কিন্তু মুনি বা ঋষি নামে আমাদের কাছে পরিচিত। এঁরা যে পদ্ধতি আবিষ্কার করে গেছেন – তা কোন বিশেষ মানবগোষ্ঠীর জন্য নয়। সর্বকালের সব মানুষের জন্য। তাঁদের সার্বজনীন মানবপ্রেমের কথা জানিনা বলেই – আমরা অনেকেই নিজেরা সংকীর্ণ জগতে বাস করছি। Yoga -র নাম শুনলে অনেক মুসলমান বন্ধু হয়ত। – এসব জিনিস তাঁদের জন্য নয় বলে ধারণা করে থাকেন। তাঁদের (প্রাচীন ঋষিদের) কাছে হিন্দু-মুসলিম-খৃষ্টান বলে কোন ভেদ ছিল না বলেই মনে হয়। পৃথিবীর যে কোন অসুস্থ মানুষের জন্য তাঁরা Yoga-র পদ্ধতিগুলি অভ্যাস করবার কথা বলে গেছেন। ধর্ম, দেশ, কাল কোন গণ্ডী তাঁদের অবদানকে সীমাবদ্ধ করতে পারে না। সুস্থ দেহে সুস্থ মনে, সুস্থ পরিবেশে, সুস্থ সমাজে বাস করবার উপায় এবং অনুশীলনকেই যদি আমরা ‘Yoga’ কথাটার অর্থ খোঁজার চেষ্টা করি। তাহলেই বোধ হয় ‘যোগাসন’ কথাটার অর্থ বুঝে উঠতে সক্ষম হবো।
Yoga-for-a-healthy-body |
কোন রোগে কি Yoga আসন করা যাবে না
রোগ | নিষিদ্ধ আসন |
---|---|
১। হৃদরোগ | শীর্ষাসন, সর্বাঙ্গাসন, বিপরীত করণীমুদ্রা। |
২। হাই ব্লাড প্রেসার | ময়ূরাসন, শশাঙ্গাসন, পশ্চিমোত্তাসন, হলাসন, পদহস্তাসন। |
৩। মেরুদন্ডের রোগ | সামনে ঝোঁকার আসন সমূহ। |
৪। মেরুদন্ডের ব্যথার | ধনুরাসন, পশ্চিমোত্তাসন, মহামুদ্রা। |
৫। স্পনডিলাইটিস | হলাসন, শশাঙ্গাসন, অর্ধকূর্মাসন, সপ্রণতি কূর্মাসন, উষ্ট্রাসন। |
৬। চক্ষুরোগ ভয়াবহ হলে | শীর্ষাসন, ধনুরাসন, জানুশিরাসন, উড্ডীয়ান, ময়ূরাসন, পশ্চিমোত্তাসন, যোগমুদ্রা। |
৭। আমাশয় | পদহস্তাসন, শশাঙ্গাসন, জানুশিরাসন। |
৮। হার্ণিয়া | পশ্চিমোত্তান, শয়ন পশ্চিমোত্তান। |
৯। প্লীহা ও যকৃতে বৃদ্ধিতে | ধনুরাসন, ভুজঙ্গাসন, শলভাসন, পশ্চিমোত্তাসন। |
১০। পুরাতন সর্দিতে | শীর্ষাসন, সর্বাঙ্গাসন। |
১১। ১৩ বয়সের পূর্বে | যোগমুদ্রা বাদে অন্যান্য মুদ্রাগুলি এবং নিষিদ্ধ ব্যায়াম গোমুখাসন ও মৎস্যসন। |
মায়েদের জন্য আরও কিছু দরকারী কথা
১। সাধারণতঃ ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সে নারীদেহে মাতৃত্বের আবির্ভাব ঘটে। প্রত্যেক মাসের ৪/৫ দিন ধরে ঋতুচক্রের আবর্তন চলে। এটা মাসে মাসে ঘটে বলে একে মাসিক বলে। মাসিকের ৪/৫ দিন Yoga আসন অভ্যাস করা নিষিদ্ধ। এই কয়েকদিন অধিকক্ষণ যাবৎ কোন ধ্যানাসনও করা উচিত নয়।
২। ঐ সময় ৪/৫ দিন যে কোন ভারী জিনিষ-ভাতের টব হাঁড়ি, জলের বড় বালতি, কলসী, ভারী কোন ঝুড়ি উঠাবেন না। সিঁড়িতে দ্রুত উঠানামাও নিষিদ্ধ।
৩। ঐসময় গায়ে অধিক ঠাণ্ডা লাগানো, বা উত্তাপ লাগানো আদৌ উচিত নয়। মুড়ি ভাজা, ধানসেদ্ধ প্রভৃতি কাজে দীর্ঘসময় উনানের কাছে বসতে হয়, সেজন্য এরূপ কাজ করা উচিত নয়। ভিজে কাপড়ে থাকা, স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বহুক্ষণ থাকা উচিত নয়। এই সময় Yoga আসন করা যাবে না হালকা কাজ করা চলে।
৪। গরম জলে ফুটিয়ে নির্বীজন করা কৌপিন ঢিলাভাবে ব্যবহার করবেন। ধুলোবালি, কীটপতঙ্গ বিহীন জায়গায় ব্যবহৃত কাপড়চোপড় শুকনো করবেন। বিছানাপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন।
৫। ঐ সময় অতিরিক্ত ঝাল, তেল মসলাযুক্ত খাবার, গুরুপাক খাবার, বাসি পান্থা প্রভৃতি খাবেন না। ঈষদুষ্ণ জলে স্নান, পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার খাবেন।
৬। অতিরিক্ত পরিমাণে মাসিক হলে তলপেটে একখানা ভিজে গামছা বা তোয়ালে পটির মত ভাঁজ করে চেপে দেবেন। মাথার নীচে বালিশ না রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকবেন। মাথা অপেক্ষা পায়ের দিক যেন আধ হাত উঁচু হয়। পায়ের দিকের খাটের পায়ায় ২/১ খানা ইট দিলেই উঁচু হয়ে যাবে।
৭। মাসিকের সময় অসহ্য যন্ত্রণা হলে তলপেটের উপর মোটা তোয়ালে রেখে গরম জলের শিশি গড়াবেন অথবা গরমজলে তোয়ালে ভিজিয়ে নিংড়ে পটি নেবেন প্রয়োজন হলে অবহেলা না করে ডাক্তারবাবুর কাছে যাবেন।
৮। গর্ভাবস্থায় চতুর্থ মাস থেকে শিশুর জন্মের পর ৩ মাস পর্যন্ত Yoga ব্যায়াম করবেন না।