প্রযুক্তিতে বয়স কমানো যাবে!
১৯৯৬-এ বিশ্বে প্রথমবার ক্লোনিংএর মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন ঘটানো হয়েছিল কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর। সে ছিল ‘ডলি দ্য ল্যাম্ব’। এবার সেই একই প্রযুক্তিতে বয়স বৃদ্ধি আটকানো এবং মানব কোশকে পুনরুজ্জীবিত করার উপায় আবিষ্কার করলেন গবেষকরা। এমনকি তার সফল পরীক্ষামূলক ব্যবহারিক প্রয়োগে কমিয়ে আনলেন দেহকোশের বয়সও। দেহকোশকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছিল নব্বই দশক থেকেই। ভেড়ার স্তনগ্রন্থি থেকে দেহকোশ সংগ্রহ করে তাকে ভ্রূণ কোশে পরিণত করাই ছিল গবেষকদের লক্ষ্য। পরবর্তীকালে এই ভ্রূণ থেকেই জন্ম নেয় ডলি। ডলির প্রজননের এই প্রযুক্তি সফল হওয়ার পর থেকেই মানব ভ্রূণের কোশ তৈরির প্রচেষ্টা শুরু করেন গবেষকরা। ২০০৬ সালে এই প্রযুক্তিতে বেশ কিছু বদল আনেন কিয়োটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তথা অধ্যাপক ডঃ শিনিয়া ইয়ামানাকা। যা গোটা প্রক্রিয়াকে করে তুলেছিল আরও সহজতর। আইপিএসখ্যাত এই পদ্ধতিতে, প্রাপ্তবয়স্ক দেহকোশকে প্রায় পঞ্চাশ দিন ডুবিয়ে রাখা হয় রাসায়নিক দ্রবণে। যা মূলত দেহকোশের জিনগত পরিবর্তন করে তাকে ভ্রূণকোশে বা স্টেম সেলে পরিণত করে। যেখান থেকে নতুন করে জন্ম নিতে পারে সম্পূর্ণ কলা। কেমব্রিজের বাব্রাহাম ইনস্টিটিউটের গবেষকরা এই একই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন ৫৩ বছর বয়সি এক মহিলার ত্বক থেকে সংগৃহীত কোশের ওপর। তবে ৫০ দিনের পরিবর্তে তা রাসায়নিক দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল মাত্র ১২ দিন। আর তার ফলাফলেই রীতিমতো চমকে যান গবেষকরা। কোশগুলির চরিত্র এবং স্বাস্থ্য বিশ্লেষণ করার পর দেখা যায়, সেগুলি প্রায় ২৩ বছর বয়সি মহিলার দেহকোশের সমতুল্য হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ, স্বাভাবিকভাবেই বয়স কমেছে কোশগুলির। সম্প্রতি এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ইলাইফ বিজ্ঞান জার্নালে।
হিট স্ট্রোক: নতুন তথ্য জানতে রোবট নিয়ে গবেষণা
হিট স্ট্রোক হলে মানবদেহে কী ঘটে? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী যে দিন দিন উষ্ণ হচ্ছে, এ থেকে রক্ষায় আমরা কী করতে পারি? প্রচণ্ড গরম পৃথিবী বা মানবজাতির ওপর কী প্রভাব ফেলছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী রোবট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। এ রোবট শ্বাস নিতে পারে, এর শরীরে কাঁপুনি হয়, এমনকি ঘামও ঝরে। সংবাদ সংস্থার খবরে এমনটাই বলা হয়েছে।
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের তৈরি এই রোবটের নাম অ্যাডভান্সড নিউটন ডায়নামিক ইনস্ট্রুমেন্ট (এ এন ডি আই অ্যান্ডি)। গত মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশেষ ধরনের এই রোবটের কথা জানায়। বর্তমানে অ্যারিজোনার রাজধানী ফিনিক্সে রোবটটি নিয়ে গবেষণা চলছে।
আরও পড়ুন :
গবেষকেরা জানিয়েছেন, মানবদেহ যেভাবে গরম অনুভব করে, রোবটটির ভিতরেও সে ধরনের প্রযুক্তি রয়েছে। তাপমাত্রার বিষয়টি অনুধাবনের জন্য রোবটটিতে পৃথক ৩৫টি ছিদ্রও রাখা হয়েছে। রোবটটি এমনভাবে তৈরি করা, যাতে করে এটি শ্বাস নিতে পারে, কাঁপুনি দেয় এবং গরমে ঘামে। এখন পর্যন্ত এ ধরনের প্রায় এক ডজন রোবট তৈরি করা হয়েছে। যেগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে। গবেষক দলের একজন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক কনরাড রেকাচেভস্কি বলেন, আবদ্ধ জায়গার বাইরের তাপমাত্রা অনুধাবন করতে পারে, বিশ্বের এমন প্রথম রোবট (ম্যানিকুইন) হলো অ্যান্ডি। কত গরম লাগছে ও এতে কী হচ্ছে, এই রোবট তা নির্ধারণ করতে পারে। মানবদেহে বিরূপ আবহাওয়ার কী প্রভাব পড়ে, সেটা বুঝতে বাস্তবসম্মত উপায়ে এটি তৈরি। ফিনিক্স শহর ও এর আশপাশে টানা ২২ দিন তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। এর আগে শহরটিতে এত দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ চলেনি। প্রচণ্ড গরমে সেখানে মত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অনেকে অসুস্থ হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ থেকেই বিশেষ এ রোবট নিয়ে গবেষণা করছেন।
গবেষকেরা আশা করছেন, এই রোবট তাঁদের হাইপারথার্মিয়া নিয়ে আরও ভালো বোঝাপড়া তৈরির সুযোগ করে দেবে। দেহের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে দেহকোষ বিকৃত, কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত, এমনকি কোষ মারা গিয়ে হাইপারথার্মিয়া হয়। এতে করে মানবদেহের অঙ্গ বিকল হওয়ার ঝুঁকি আছে। এ সময় হিট স্ট্রোকের কারণে মৃত্যুও হতে পারে।