রজঃ নিবৃত্তির আক্ষরিক অর্থ হলো “মাসিক বিলুপ্তি”। ৪০ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে বয়সের কোনো মহিলার যদি টানা এক বছর ধরে মাসিক না হয়ে থাকে তবে তার রজঃ নিবৃত্তি ঘটেছে বলা যায়। মহিলাদের জীবনে এটা একটি মোড় (টার্নি়ং পয়েন্ট), রোগ নয়, যদিও এর একটা বড় প্রভাব পড়ে মহিলাদের সুস্থ থাকার ওপর।

রজঃ নিবৃত্তি: লক্ষণ
রজঃনিবৃত্তিকালে সাধারণভাবে যেসব লক্ষণ অনুভূত হয় তাকে মেনস্ট্রুয়েল সিনড্রোম বলা হয়ে থাকে। এটা মহিলাদের জীবনের একটা উত্তরণ বা রূপান্তর কাল। এসময়ে ডিম্বাশয় ডিম্ব উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। স্ত্রী হরমোহন যেমন ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরণ এসময়কালে উৎপাদন কমতে থাকে।
মেনস্ট্রুয়েল কাজকর্ম কোনোরকম আগাম হুঁশিয়ারি না দিয়েই হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রায়শই মাসিকে সময়কাল অধিকতর কাছাকাছি চলে আসে অথবা সময়ের ব্যবধান অনেক বেড়ে যায় কিংবা বেশ কয়েক মাস বছর ধরে রক্ত স্রাবের পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে।। অতিরিক্ত বা দীর্ঘায়িত রক্তস্রাব স্বাভাবিক রজঃনিবৃত্তির অভিমুখবর্তী হওয়ার লক্ষণ কখনোই নয়। রজঃনিবৃত্তির লক্ষণ শারীরিক এবং মানসিক উভয়ই।
আরও পড়ুনঃ ক্যান্সারের (of cancer) সাথে লড়াই: ফোসিপির সমর্থন এবং প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব
ক. দৈহিক পরিবর্তন সমূহ
১) গরম ফ্লাশ:- ২৪ ঘন্টায় এক থেকে দু’বার যেমন দেখা দিতে পারে আবার প্রতি ১৫ থেকে ৩০ মিনিট অন্তর দেখা দিতে পারে। প্রায়ই এর সঙ্গে প্রচুর ঘাম হতে পারে। এগুলো দিনে বা রাতে যেকোনো সময়ে দেখা দিতে পারে।
২) নৈশ ঘাম:- রাতের ঘামে ঘুম ব্যাহত হয়। খামে মহিলা ভিজে যেন স্নান করে ফেলেন।
৩) শরীরের ত্বকে লাল উদ্ভেদ বা লাল ছোপ দেখা দে।
৪) ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া/ প্রস্রাব পড়তে থাকা।।
৫) যোনিদ্বার শুকিয়ে যাওয়া এবং যৌন সঙ্গমকালে যন্ত্রনাবোধ হওয়া।
৬) অস্থি সন্ধিতে ব্যথা ও শরীর ব্যথা।
৭) বুক ধড়ফড় করা: নিজের হৃদঘাত নিজে অনুভব করা।
৮) মেরুদন্ডের অগ্রভাগে ব্যথা।
৯) রজঃনিবৃত্তির পরবর্তী বছরগুলিতে করোনারি আর্টারি বোগ (হৃদ রোগ) -এর ঘটনা বেড়ে যায় এবং এটা প্রায় পুরুষের মতোই।
১০) অস্টিওপোরোসিস হাড়গুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এবয়সে হাড় ভাঙার ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। এরমধ্যে ৫০ শতাংশই মেরুদন্ডের হাড়ে চিড় ধরা। তার পরই হিপ এবং হাতের হাড় ভাঙা।
১১) ক্ষুধা বাড়তে পারে আবার কমেও যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা (ডিসপেপশিয়া) হতে পারে।
খ. মানসিক পরিবর্তন সমূহ
বিষয়টা সম্পর্কে যেসব মহিলা আগে থেকেই অবহিত থাকেন এবং ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারেন, তাদের ক্ষেত্রে এসব পরিবর্তন অতি সামান্য।
২) ঘুমোতে না পারা।
২) মানসিক অবসাদ।
৩) ঘাবড়ে যাওয়া এবং উত্তেজিত হয়ে পড়া।
৪) ভুলে যাওয়া।
৫) কোনো কিছুতে মনো সংযোগ করার অক্ষমতা।
৬) মাথা ব্যথা।
৭) মেজাজ ঘন ঘন বদলে যাওয়া এবং উৎকণ্ঠা।
৮) হাত এবং পায়ের সংবেদনশীলতার পরিবর্তন।
৮) যন্ত্রণাদায়ক এবং শিথিল স্তন।
১০) শুস্ক চোখ।
ব্যবস্থাপনা
- দয়া করে আপনার চিকিৎসকের কাছে যান। তিনি প্রথম অভিযোগ অনুসারে জৈবিক রোগগুলো দূর করবেন।
- মনে রাখবেন, রজঃনিবৃত্তি জৈবনিক পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করছে, জীবনের অবসান নয়।
- খাবার দাবারের যুক্তিসম্মত বিধিনিষেধ এবং যথাযথ ব্যায়ামের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ওজন বৃদ্ধি রোধ করতে হবে।
- যেসব মহিলা সপ্তাহে তিন বা তার বেশিবার ব্যায়াম করেন, তাদের ক্ষেত্রে রজঃনিবৃত্তিকালীন লক্ষণগুলো তুলনায় খুবই কম দেখা দেয়
- হালকা ব্যায়ামও সাহায্য করে। হাঁটা অত্যন্ত নিরাপদ ও সহজতম। দৌড়ানো, বিমান বা বেলুনে ওড়া, ভারোত্তোলন, সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা অত্যন্ত কাজে আসে, তবে এগুলো করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই।
- খাবারে ভালো পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকতে হবে। দুধ, বিন, ব্রোকোলি, স্পাইনাক, মাছ হলো ক্যালসিয়ামের ভালো খাদ্যগত উৎস। কিন্তু ক্যালসিয়ামের পরিপূরক হিসেবে ফাইটকস্ট্রোজেন প্রয়োজন হতে পারে যা পাওয়া যায় সয়াবিন, ডাল, শিম, মটরশুঁটি প্রভৃতিতে এবং এগুলোর পর্যাপ্ত গ্রহণ রজঃ নিবৃত্তিকালীন লক্ষ্মণগুলিকে প্রতিরোধ অথবা এসব লক্ষ্মণ থেকে পরিত্রাণ করতে পারে।
- বেশি পরিমানে লবণ খাওয়া, মদ্যপান, কফি খাওয়া, বাতাস মিশ্রিত (কার্বন-ডাই-অক্সাইড) পানীয় এড়িয়ে যেতে হবে।
- যৌন মিলনকালীন ব্যাথা দেখা দেয় যৌনাঙ্গের শুষ্কতার জন্য। এটা দূর করতে হবে জলে দ্রাব্য পিচ্ছিলকারী পদার্থ লাগিয়ে।
- রজঃনিবৃত্তির তাৎপর্য স্বামীরও বোঝা দরকার এবং সহনশীল হওয়া দরকার।
- প্রয়োজনে ব্যাখ্যা বা উৎসাহদানের চাইতেও আপনার চিকিৎসক চিকিৎসার অন্য উপায় দেবেন। আপনাকে একটা বেছে নিতে হবে। যাতে আপনাকে আর রজঃনিবৃত্তিকালীন সিনড্রোমে ভুগতে না হয়।