মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা (Menstrual pain):-
কারণ ও প্রতিকার মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা (Menstrual pain) হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। বিশেষ করে কিশোরী এবং কম বয়সি মেয়েদের মধ্যে এটি বেশ প্রচলিত। সাধারণত, এই ব্যথা মাসিকের সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়। তবে কখনো কখনো ব্যথার তীব্রতা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে দৈনন্দিন জীবনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। ব্যথার কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে এটি মোকাবিলা করা অনেক সহজ হয়।

মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথার প্রধান কারণগুলো হল অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অনিয়মিত মাসিক, এবং মাসিক শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে হরমোনের পরিবর্তনজনিত কারণে পেটব্যথা। ব্যথার মাত্রা বয়সের ওপর নির্ভর করে বাড়তে বা কমতে পারে। তবে ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে, তাহলে তা অবশ্যই উদ্বেগের কারণ হতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য কিছু সাধারণ এবং কার্যকরী উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন, তলপেট এবং পিঠের নিচের অংশে উষ্ণ কিছু ধরে রাখা, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, তলপেট, পিঠ এবং কোমরে মালিশ করা বা উষ্ণ জলে স্নান করা ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। হালকা শরীরচর্চা, যোগব্যায়াম, এবং ধ্যানও ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ছাড়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা, কুসুম গরম জলে আদাকুচি মিশিয়ে পান করা, এবং চা, কফি, চকোলেট, অ্যালকোহল এড়িয়ে চলাও ব্যথা কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যথা কমানোর অন্যান্য উপায়গুলি অনুসরণের পরেও যদি তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, তবে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তাতেও সমস্যা না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে দীর্ঘমেয়াদে ভালো থাকার জন্য জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা, এবং চাপমুক্ত জীবনযাপন এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
উদ্ভিজ্জ উৎসের খাবার, যেমন শাকসবজি, ফলমূল, এবং উচ্চ আঁশসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খাওয়া উচিত। এছাড়া, কাঠবাদাম ও আখরোটের মতো শুকনো ফল এবং দুধ ও দুধের তৈরি খাবার দৈনিক খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এসব খাদ্য উপাদান শরীরের শক্তি বৃদ্ধি এবং হরমোনের সঠিক কার্যকারিতায় সহায়তা করে।
মাসিকের সময় ব্যথা হলে কিছু উপসর্গের ওপর বিশেষভাবে নজর রাখা উচিত। যেমন, ব্যথার কারণে প্রতি মাসে দৈনন্দিন জীবনের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে কিনা, ব্যথার তীব্রতা সময়ের সঙ্গে বাড়ছে কিনা, বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা। এছাড়া, মাসিকের সময় চাকা চাকা রক্ত গেলে, মাসিক অনিয়মিত হলে, বা ২৫ বছর বয়সের পর থেকে নতুন করে তীব্র ব্যথা শুরু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ব্যথার সঙ্গে জ্বর, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, বা পাতলা পায়খানা হলে সেটিও চিন্তার বিষয়।
মাসিকের সময় ব্যথা একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হলেও এর তীব্রতা এবং কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। উপযুক্ত প্রতিকার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।
মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ছাড়াও আরও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিচে কিছু ওষুধের নাম দেওয়া হলো যেগুলো মাসিকের ব্যথা উপশমে সহায়তা করতে পারে:
নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAIDs):
যেমন ইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেন। এগুলো প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে কার্যকর। মাসিকের প্রথম দিন থেকেই এগুলো শুরু করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
অ্যান্টিস্পাজমোডিক ওষুধ :-
যেমন ড্রোটাভেরিন বা হাইওসিন। এগুলো পেশির খিঁচুনি কমিয়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
মেফেনামিক অ্যাসিড :-
এটি NSAIDs-এর একটি ধরনের ওষুধ যা ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়। মাসিকের ব্যথার জন্য এটি অনেক সময় কার্যকর প্রমাণিত হয়।
হরমোনাল কন্ট্রাসেপ্টিভস :-
যদি মাসিকের ব্যথা খুব বেশি হয় এবং নিয়মিত হয়, তাহলে চিকিৎসক গর্ভনিরোধক বড়ি (oral contraceptive pills) প্রেসক্রাইব করতে পারেন। এটি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রেখে মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড:-
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে এই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়। এটি রক্তের জমাট বাঁধা প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে, ফলে রক্তক্ষরণ কমে এবং ব্যথাও হ্রাস পেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ- Sitting for a long time : দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা কি আপনার পায়ের জন্য বিপজ্জনক?
ওষুধের ব্যবহার শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ সবার জন্য একই ওষুধ কার্যকর নাও হতে পারে এবং কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদে ওষুধের ওপর নির্ভর না করে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা উচিত।