কাঠবাদাম (Peanut): ওজন কমানো থেকে মস্তিষ্কের বিকাশ

প্রাচীনকাল থেকেই মিশরীয় এবং ভারতীয়দের খাদ্যতালিকায় কাঠবাদামের বিশেষ স্থান ছিল। এই কাঠবাদাম (Peanut) বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, আমিষ এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঠবাদাম কিছু ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। কাঠবাদাম নিয়মিত খেলে শরীরের বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়। আসুন, কাঠবাদাম খেলে শরীরে কী কী উপকারিতা ঘটে তা জেনে নিই।

কাঠবাদাম (Peanut): ওজন কমানো থেকে মস্তিষ্কের বিকাশ
পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সুপারফুড

 

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:

কাঠবাদামে প্রচুর ক্যালরি থাকলেও এটি ওজন কমাতে সহায়ক। এতে উপস্থিত আঁশ, আমিষ এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, কাঠবাদাম খেলে পেট ভরে থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এতে শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি দূর হতে সাহায্য করে। তবে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত হওয়ায় এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়:

কাঠবাদামে অ্যামাইনো এসিড এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের উপস্থিতি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এটি মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখার পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধিতেও সহায়ক। কাঠবাদাম নিয়মিত খেলে মনোযোগ ধরে রাখা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ানো যায়। এছাড়াও এটি মানসিক চাপ ও অনিদ্রা দূর করতেও সহায়ক।

ত্বকের যত্ন:

কাঠবাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই রয়েছে, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বককে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সহায়ক। প্রতিদিন চারটি কাঠবাদাম খেলে ত্বকের কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ে এবং ত্বক নরম ও উজ্জ্বল হয়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:

গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে অন্তত পাঁচবার কাঠবাদাম খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে। কাঠবাদামে থাকা মনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। এটি ধমনীতে চর্বি জমার ঝুঁকি কমায় এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

হাড় মজবুত করে:

কাঠবাদাম ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়ক। কাঠবাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং মাংসপেশি শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।

চোখের দৃষ্টি প্রখর করে:

কাঠবাদামে থাকা ফসফরাস চোখের দৃষ্টি ভালো রাখতে সহায়ক। নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে দৃষ্টিশক্তি প্রখর হয় এবং চোখের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

গর্ভাবস্থায় উপকারী:

গর্ভাবস্থায় কাঠবাদাম খেলে মায়ের এবং অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ কাঠবাদাম গর্ভের শিশুর বিকাশে সহায়ক। বিশেষ করে, ফিটাস যদি ধীরে বৃদ্ধি পায়, তখন কাঠবাদাম হতে পারে একটি ভালো সমাধান।

ক্যান্সার প্রতিরোধ:

কাঠবাদামের ভিটামিন বি ও ফ্ল্যাভনয়েড স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এতে থাকা বোরন প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

কিভাবে খাবেন:

প্রতিদিন ৪ থেকে ১৪টি কাঠবাদাম খাওয়া যেতে পারে। রাতভর জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে আরও বেশি উপকার মেলে। এছাড়া স্যালাড, পায়েস, আইসক্রিম, কেক, পোলাও বা ফ্রায়েড রাইসের সঙ্গে কাঠবাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন।

কাঠবাদামের উপকারিতা শুধু শরীরের ভিতরে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কাঠবাদামে থাকা ভিটামিন বি এবং ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কাঠবাদাম খান, তাদের মধ্যে মানসিক চাপের মাত্রা অন্যদের তুলনায় কম থাকে। কাঠবাদামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণ মস্তিষ্কের কোষগুলিকে রক্ষা করে এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি মনোযোগ বৃদ্ধি ও কাজের প্রতি মনোযোগী হতে সাহায্য করে, যা দৈনন্দিন জীবনে সফল হতে সহায়ক হতে পারে।

শুধু তাই নয়, কাঠবাদাম বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে একাধিক উপায়ে উপভোগ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, সকালের নাশতায় মুসেলির সঙ্গে কাঠবাদাম যোগ করতে পারেন বা দুপুরের খাবারের স্যালাডে পুষ্টিগুণ বাড়ানোর জন্য এটি মেশাতে পারেন। যারা ডেজার্ট পছন্দ করেন, তারা মিষ্টির সঙ্গে কাঠবাদাম মিশিয়ে এর উপকারিতা উপভোগ করতে পারেন। তাছাড়া, কাঠবাদামের তেলও অত্যন্ত উপকারী, যা চুল ও ত্বকের পরিচর্যায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এভাবে কাঠবাদাম শুধুমাত্র খাবার হিসেবেই নয়, সৌন্দর্যচর্চায়ও একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠতে পারে।

এছাড়া আরো পড়ুন:- ওজন কমাতে লেবুজল (Lemon water) : কীভাবে এবং কবে খাবেন?

Leave a Comment