অসুস্থতা থেকে মৃত্যু: ঔষধেই | In medicine লুকিয়ে ভয়ঙ্কর বিপদ

অসুস্থতা থেকে মৃত্যু: ঔষধেই | In medicine লুকিয়ে ভয়ঙ্কর বিপদ
জাল-ভেজাল নকল ঔষধের কারবার বিশ্বব্যাপী

।। সুমহান চক্রবর্তী।। 

আমরা ঔষধ খাই সুস্থ হতে, জীবন রক্ষা করতে। কিন্তু, এই ঔষধেই (In medicine) কখনো কখনো মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ অনেক দাম দিয়ে কেনা ঔষধটাও আসল নাকি নকল, নাকি ভেজাল তা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আমরা রোগীরা অসহায়।

এই জাল-ভেজাল নকল ঔষধের কারবার বিশ্বব্যাপী। তারমধ্যে এগিয়ে আমাদের দেশ। অ্যাসোচেম এর রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের প্রায় ২৫ শতাংশ ঔষধ নকল বা ভেজাল। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, ভারতেই সবচেয়ে বেশি নকল বা নিম্নমানের ঔষধ তৈরি হয়। অত্যন্ত দুর্বল, অপর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ও পরিদর্শন ব্যবস্থার ফলে নিয়ন্ত্রণহীন উৎস থেকে তৈরি ভেজাল ঔষধ ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশের বাজারে। আর সেটাই খাচ্ছি আমরা। দেশের সমস্ত ঔষধ কোম্পানিগুলিকে নিয়ে কোনও একত্রিত তালিকা নেই। নেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে কতগুলি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে তার কোনও কেন্দ্রীয় ডেটাবেস।

জাল, নকল ও ভেজাল ঔষধ কী?

কোনও নামকরা কোম্পানির উৎপাদিত কোনও চালু ঔষধ যদি অন্য কোনও সংস্থা উৎপাদন করে ওই নামী কোম্পানির নামে, একইরকম লেবেল দিয়ে বাজারে বিক্রি করে তবে তা জাল ঔষধ। কোম্পানির নাম ও ব্যাচ নম্বরও জাল করা হয়। এতে ঔষধের সক্রিয় উপাদান থাকতেও পারে আবার না থাকতেও পারে। যে পরিমাণ সক্রিয় উপাদান থাকার কথা, তা না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। অনেক সময় সক্রিয় উপাদানের বদলে দেওয়া হয় কম দামের অন্য উপাদান।

নকল ঔষধ হলো আসল ঔষধের অনুকরণে প্যাকেজিং এবং লেবেলিং করে নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাকে এড়িয়ে উৎপন্ন হওয়া ঔষধ। এই জাতীয় ঔষধে কার্যকারিতার অভাবের সাথে সাথে ক্ষতিকারক বা বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতিও থাকতে পারে, যা জীবন সংশয় সৃষ্টি করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই জাতীয় ঔষধ অবৈধ বা নিয়ন্ত্রণহীন বাজারের মাধ্যমে কিংবা আজ কাল অনলাইনেও বিক্রি করা হয়।

আর ভেজাল ঔষধে ভুল ও অকার্যকর, গুণমান পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ সক্রিয় উপাদান বা বিষাক্ত উপাদান থাকতে পারে। যার লেবেল বা প্যাকেজিং দেখে ক্রেতাদের চেনার উপায় থাকে না ঔষধটা খাঁটি কিনা। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা, ঔষধের কার্যকারিতা ও ঔষধের গুণমানের খামতির বিষয়গুলি রোগীদের কাছে ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায়। ব্র্যান্ডেড বা জেনেরিক দু’ধরনের ঔষধেই এই আশঙ্কা থেকে যায়।

আমাদের দেশে ঔষধের টেস্টিং ল্যাবরেটরিগুলিতে সাধারণত দেখা হয় সক্রিয় উপাদান নির্দিষ্ট মাত্রায় আছে কিনা। কিন্তু তার দ্রবণীয়তা অথবা সাথে অন্য আরও কিছু আছে কিনা বা প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলিতে তা উত্তীর্ণ কিনা, তা সাধারণভাবে দেখা হয় না ব্যবস্থার অপ্রতুলতায়। ফলে অনেক সময় ভয়ংকর প্রভাব পড়ে রোগীর ওপরে।

যেমন, ২০১৩ সালে চেন্নাইয়ের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে ধরা পড়ে ডায়াবেটিসের একটি ঔষধে ‘গ্লিপিজাইড’ এর বদলে দেওয়া হয়েছে ‘গ্লিবেনক্ল্যামাইড’ নামে অন্য একটি সস্তা উপাদান। গ্লিপিজাইডের দাম গ্লিবেনক্ল্যামাইডের চেয়ে চারগুণ বেশি। বেশি লাভ করার জন্য আসল ঔষধটাই পালটে দেওয়া হয়েছে। যদিও মোড়কের ওপরে লেখা আছে ‘গ্লিপিজাইড’।

২০১২ সালে কাশ্মীরে প্রায় ৩০০ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল নিউমোনিয়াতে। এই শিশুদের যে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ (Ceftriaxone) দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের।

কেমোথেরাপি ও ক্যানসারের ক্ষেত্রেও জাল ঔষধ ধরা পড়েছে দিল্লিতে। বেশ কিছু হাসপাতালে ফুসফুস, কিডনি, খাড়-মস্তিষ্কের ক্যানসারের জন্য ব্যবহার হয় ‘Opdyta’ নামের একটি ঔষধ। দাম প্রতি ভায়েল ২১, ৫০০ টাকা। আবার সারভাইক্যাল, বিলিয়ারি ডাকট ও ব্রেস্ট ক্যানসারের জন্য ব্যবহার করা হয় ‘Keytruda’ যার ১০০ মিলি ভায়েলের দাম ২,০২,৩৯০ টাকা। আর ব্লাডার ক্যানসারের জন্য “ইনফিনজি” নামের একটি ঔষধের দাম প্রতি ভায়েল ১,০৫,০০০ টাকা। এই ঔষধগুলির মধ্যে যে সক্রিয় উপাদান থাকার কথা, তা তো ছিলই না, তার বদলে ভায়েল এর মধ্যে পাওয়া গেছে অ্যান্টিফাঙ্গাল সলিউশন, যার দাম ২৭ টাকা।

২০২২ সালে গাম্বিয়া উজবেকিস্তানে, আমাদের দেশের মেইডেন ফার্মা নামের একটি কোম্পানির রপ্তানি করা কাশির সিরাপ খেয়ে ৯৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ল্যাবরেটরি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই কাশির ঔষধে পাওয়া গেছে ডাই ইথিলিন গ্লাইকল ও ইথিলিন গ্লাইকল নামে দুটি বিষাক্ত রাসায়নিক। শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এই রাসায়নিক কাশির ঔষধে থাকার কথা নয়। এ ছাড়াও শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি করা চেতনানাশক ঔষধে রোগীদের মৃত্যু আর চোখের ড্রপে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দেশেও বহু নামকরা ঔষধ কোম্পানি গুণমান পরীক্ষায় পাশ না করা, নিম্নমানের ঔষধের উপাদান বা বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতিসহ ঔষধ বাজারে বিক্রি করছে।

কোভিড সময় অতিমারীর ২০০০ টাকার ‘রেমডিসিভির’ (অ্যান্টিভাইরাল) ইনজেকশন কালোবাজারে খুল্লমখুল্লা বিক্রি হয়েছে ৪০০০ টাকায়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, হেটেরো কোম্পানির এই ইনজেকশনটি ছিল অতি নিম্নমানের, জাইডাস কোম্পানির তৈরি এই ইঞ্জেকশনে পাওয়া গেছে বিষাক্ত ‘ব্যাকটেরিয়াল এনডোটক্সিন’, আর সিপলা কোম্পানির ইঞ্জেকশনে ‘রেমডিসেভির’ এর পরিমাণ ছিল অনেক কম।

পশ্চিমবঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালের স্যালাইনে প্রসূতি মৃত্যুর কারণ ছিল সংক্রমণকারী পদার্থের উপস্থিতি। এটাও নতুন নয়, বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে স্যালাইনে ছত্রাক বা অন্য বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

তথ্য বলছে, ভারতের বড় শহরগুলিতে প্রতি ৫ স্ট্রিপ বিক্রিত ঔষধের ১ টিই ভেজাল। এই ভেজাল ওষুধের ব্যবসা নির্মূল করতে সরকারের সদিচ্ছা কতটুকু সেটাই প্রশ্নের।

সংবাদ মাধ্যমে আমরা প্রায় রোজই ভেজাল ঔষধ বাজেয়াপ্ত করার খবর পাই। কিছুদিন আগেই কলকাতার ভবানীপুরে, বড়বাজারে, হুগলী জেলায় বিপুল পরিমাণ জাল ঔষধ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কিন্তু এই ওষুধের উৎস কোথায়, তৈরি কোথায় হয়েছে, কোন্ সংস্থা তৈরি করেছে, তার মালিক কে, সে সব প্রশ্ন পর্দার আড়ালেই থেকে গেছে। আমাদের দেশে এই জাল বা ভেজাল ঔষধের কতগুলো নির্দিষ্ট বাজার আছে। দিল্লি, উত্তর প্রদেশ এবং দক্ষিণ ভারতের দু’একটা বাজার, যেখানে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে প্রতিদিন। এ তথ্য সবাই জানে, সরকার জানে না?

মাঝে মাঝেই এই বাজারগুলি থেকে কোটি কোটি টাকার ভেজাল ও নকল ওষুধ বাজেয়াপ্ত হওয়ার খবর আসে কিন্তু সেই ঔষধগুলির প্রস্তুতকারক সংস্থার মালিকরা অধরাই থেকে যায়।

প্রধানত: রাজ্যকেন্দ্রের ড্রাগ কন্ট্রোলের অতি দুর্বল পরিকাঠামো, কর্মীর অভাব, ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির অপ্রতুলতা, কেন্দ্রীয়ভাবে ঔষধ সংস্থাগুলির কোনও সর্বভারতীয় ডেটা ব্যাংক না থাকা এবং সর্বোপরি সরকারি নীতির দুর্বলতার ফাঁক দিয়ে বিপুল পরিমাণে নকল ও ভেজাল ঔষধের রমরমা ব্যবসা চলছে। পূর্বাঞ্চলের কলকাতায় যে সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি আছে তার আওতায় রয়েছে এগারোটি রাজ্য, অরুণাচল, আসাম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ওড়িশা, সিকিম, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ। এখানে ৫০৪টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৩০৩টি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি। আর কিছুদিন আগে পর্যন্ত রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তরে ৭৭ টি ইন্সপেক্টর পদই ছিল শূন্য। স্বভাবতই, এই বিশাল অঞ্চলের জন্য দুটি ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি, নামমাত্র কর্মীসংখ্যার ফলে ভীষণভাবে মার খাচ্ছে ঔষধের স্যাম্পেল টেস্টিং। বেশ কিছু রাজ্যেই ড্রাগ কন্ট্রোল ব্যবস্থা ভীষণ দুর্বল, অসাধু ব্যবসায়ীরা সেই রাজ্য থেকেই ঔষধ উৎপাদনের লাইসেন্স জোগাড় করে এই ব্যবসা চালাচ্ছে সারা দেশে। বেলাগাম বিক্রি করছে জাল, নকল ও ভেজাল ঔষধ।

এদেশে শুধু খোলা বাজারে নয়, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেও কম গুণমান সম্পন্ন ঔষধ সরবরাহ করার বহু দৃষ্টায় রয়েছে এবং ধরাও পড়েছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোনও গুরুতর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের ২০১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫-১৬ সালে, সিপলা, ইপকা, অ্যালকেম, মোরপেন, এবোট, টরেন্ট, সানোফি ইত্যাদি নামজাদা সংস্থাও কম গুণমান সম্পন্ন ঔষধ বাজারে ছেড়েছিল, পরে জানাজানি হওয়ায় ওই ব্যাচের ঔষধগুলি বাজার থেকে তুলে নেয়, কিন্তু এদের কারও বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সরকার নেয়নি। আসলে, এই দুর্নীতির মূল বহুদুর বিস্তৃত।

দেশে কি প্রতিরোধের আইন নেই?

আমাদের দেশের বিভিন্ন আইনে নকল, জাল বা ভেজাল ঔষধ উৎপাদন, সরবরাহ বা বিক্রির জন্যে যথেষ্ট শাস্তির বিধান রয়েছে। ড্রাগ অ্যান্ড কসমেটিক অ্যাক্ট, ১৯৪৫ এবং ২০০৮ এর সংশোধনীর ২৭ ও ২৭-এ ধারা অনুযায়ী নকল, জাল বা ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, সরবরাহ বা বিক্রির জন্যে ন্যূনতম ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ন্যূনতম ১০ লক্ষ টাকা থেকে বাজারে বাজেয়াপ্ত ঔষধের দামের ৩ গুণ অর্থ জরিমানার আইনগত বিধান রয়েছে। এছাড়াও আছে আই পি কোড ও ট্রেড মার্ক আইনে নানা ব্যবস্থা। জাল ও নকলের এ ধরনের ব্যবসাকে আমলযোগ্য অপরাধ (cognizable offence) বলা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে যে কোনও রাজ্যের পুলিশও ব্যবস্থা নিতে পারে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা অনুযায়ী।

কিন্তু শাস্তি কোথায়?

আজ পর্যন্ত নকল, জাল বা ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, সরবরাহ বা বিক্রির জন্যে একটি ক্ষেত্রেও কারও কারাদণ্ড হয়নি। ন্যূনতম ১০ বছর তো দূরের কথা, এই ধারা কারও ক্ষেত্রে এক দিনের জন্যেও কার্যকর হয়নি।

এই ভয়ংকর অপরাধীদের শাস্তি সেবার বিধান থাকলেও সরকারের দিক থেকে কোনও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। ৩৭টি ওষুধ কোম্পানি কেন্দ্রের শাসক দল ও তার বন্ধু দলগুলিকে নির্বাচনি বন্ডে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা দান করে ছাড় পেয়েছে। বহু অভিযোগের থেকে। নামজাদা কোম্পানিগুলি বিষাক্ত নিম্ন গুণমান কম সক্রিয় উপাদান নিয়েও নানা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়েও বাজারে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ ও আডমিনিস্ট্রেশনের নির্দিষ্ট অভিযোগের পরেও।

লোন লাইসেন্স ব্যবস্থা

হিমাচল প্রদেশ, গুজরাট, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, চণ্ডীগড়সহ বেশকিছু জায়গায় কয়েক হাজার ওষুধের ফ্যাক্টরি আছে, যারা শুধুমাত্র অন্য কোম্পানির জন্য উৎপাদন করে দেয়, নিজেরা মার্কেটিং করে না। দেশের কয়েক হাজার ঔষধ কোম্পানি যাদের নিজস্ব কোনও ফ্যাক্টরিই নেই তারা এদের কাছ থেকে লোন লাইসেন্সে ঔষধ তৈরি করিয়ে নিয়ে বিক্রি করে। বিশেষ করে জেনেরিক ঔষধের ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থাই বেশি। এই ফ্যাক্টরিগুলির বেশিরভাগের কোনও ‘গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস’ সার্টিফিকেট নেই। প্রতিটি ব্যাচের গুণগত মান পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা আছে কিনা সেটাও প্রশ্নের।

এরপর আছে ডিসকাউন্ট। আজকাল অনেক দোকানেই ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। খরচ কমাতে অনেকেই ডিসকাউন্টে ঔষধ কেনেন, যেখানে এই লোন লাইসেন্সে তৈরি করা আঞ্চলিক কোম্পানিগুলির ঔষধগুলিই বেশি বিক্রি হয়। আমাদের রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির ভেতরে ঔষয়ের দোকানে এই জাতীয় ঔষধই বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। আর এই ডিসকাউন্টেড ঔষধের ফাঁক দিয়েই বাজারে ঢুকে পড়ে জাল, নকল আর ভেজাল ঔষধ।

আর একটা বিষয় হলো মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ। মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ঐ ঔষধকে নষ্ট করে দেওয়াই নিয়ম। ঔষধের প্রতিটি স্ট্রিপে এবং ফাইলের গায়ে উৎপাদনের ও মেয়াদ শেষের তারিখ, ব্যাচ নাম্বার ছাপা থাকে। অন্যথা হলে তা আইন বিরুদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য। পাইকারি বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধের গায়ের পুরানো লেখা মুছে দিয়ে নতুন করে ব্যাচ নাম্বারসহ উৎপাদনের ও মেয়াদ শেষের তারিখ ছেপে দেয়।

তাহলে কী করব আমরা? পীড়াচকে

জাল, নকল এবং ভেজাল ঔষধ বন্ধ করা বড় চ্যালেঞ্জ, এর দায়িত্ব সরকারের। যার জন্যে দরকার কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং শক্তিশালী বিধি নিষেধের প্রয়োগ, CDSCO এবং রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল সংস্থাগুলির নজরদারি ও পরিদর্শন ব্যবস্থাকে উন্নত ও কার্যকর করা, সমস্ত শূন্য পদে অবিলম্বে প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ, লাইসেন্সিং ব্যবস্থার কঠোর এবং নিয়মিত নজরদারি, ঔষধের মান পরীক্ষার ল্যাবরেটরিগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুততার সাথে পরীক্ষার রিপোর্ট, অভিযোগ প্রমাণে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা, অনলাইনে ঔষধ বিক্রির ক্ষেত্রে সতর্ক নজরদারি। জেনেরিক ওষুধের গুণমান ও অন্যান্য পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সতর্ক দৃষ্টি, বিক্রির অনুমতির আগে ঔষধের প্রতিটি ব্যাচের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াকে আবশ্যিক করা, বিভিন্ন রাজ্যের দেওয়া লাইসেন্সগুলি নিয়মিত যাচাই ও দেশের সমস্ত ঔষধ কোম্পানিগুলির কেন্দ্রীয় ডেটাবেস তৈরি, হাসপাতাল এবং প্রতিষ্ঠানে কেবলমাত্র বিশ্বস্ত উৎস থেকেই ঔষধ সংগ্রহ, ঔষধ জালিয়াতি সম্পর্কিত মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি, ঔষধের স্ট্রিপ বা ফাইলে বারকোড চালু করা, ক্যাশমেমোসহ ঔষধ কেনা ইত্যাদি।

সেইসঙ্গে এই ভয়ংকর অসাধু ব্যবসা বন্ধে ও সরকারি তৎপরতার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, স্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মী, চিকিৎসক, ঔষধ বিপণনকারী কর্মী, বিজ্ঞান কর্মীদের দায়িত্ব নিতে হবে মানুষকে সচেতন করে এই আন্দোলনে শামিল করতে। এগিয়ে আসতে হবে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলিকেও। সৌজন্যে: গণশক্তি।

Leave a Comment