সকালের প্রাতঃরাশে একটা ডিম (Egg) থাকার অর্থই হলো, ভরপুর পুষ্টি নিয়ে দিনটা শুরু করা। গড়পড়তা আকারের একটি মুরগির ডিমে ছয়-সাত গ্রাম আমিষ থাকে। অন্যান্য প্রাণীজ আমিষের চেয়ে ডিমের দাম । তুলনামূলক কম। আমিষ ছাড়াও ডিমে মেলে দেহের প্রয়োজনীয় বহু পুষ্টি উপাদান। প্রাণীজ উৎস হওয়ায় ডিমের আমিষে মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের সবই পাওয়া যায়।
ঝটপট তৈরি করে নেওয়া যায় ডিমের যেকোনো পদ। চাইলে বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিশিয়েও রান্না করা যায় ডিম। ডিমের এতরকম পদের মধ্যে পুষ্টিগুণে কোল্টিন্ট সেরা, এ প্রশ্ন নিয়েই এখানে আলোচনা। পুষ্টিবিদরা বলেন, তাপ দিলে আমিষের গড়ন কিছুটা বদলাতে থাকে। আমিষের স্বাভাবিক নমনীয় ভাবটা থাকে না। কিন্তু শক্ত হয়ে যাওয়া আমিষ ভালোভাবে দেহে শোষিত হয় না। তার মানে, তাপ দিতে থাকলেই ডিমের পুষ্টিমান একটু একটু করে কমতে থাকে। তিন-চার মিনিট বা সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তৈরি হয়ে যায়, ডিমের এমন পদ সবচেয়ে ভালো। কারণ, তাতে পুষ্টিগুণ থাকে অটুট। এই পুষ্টিবিদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সেদ্ধ ডিম: সেদ্ধ ডিমে পুষ্টিগুণ বজায় থাকে ঠিকঠাক। সেদ্ধ ডিম থেকে আমাদের দেহে ডিমের সব পুষ্টিগুণ সহজেই শোষিত হয়। সহজপাচ্য এই পদ সব বয়সি মানুষের উপযোগী। এতে তেলের = ব্যবহার নেই, তাই নেই বাড়তি ক্যালরি গ্রহণের ঝুঁকিও। তাই নিঃসন্দেহেই সেদ্ধ ডিম দারুণ এক পদ।
জল পোচ: জল পোচে ডিমের সাদা অংশটা বেশ নরম থাকে। এই পদ থেকেও ডিমের পুষ্টি উপাদানগুলো আপনি পাবেন ঠিকঠাক। এখানেও তেলের ব্যবহার নেই। তাই নেই বাড়তি ক্যালরির ভয়ও।
তেলে ভাজা পোচ: তেল দিয়ে ডিম পোচ করা হলে তা থেকেও আপনি ডিমের পুষ্টিগুণ পাবেন বেশ। তবে এতে ডিমের সাদা অংশ একটু শক্ত হয়ে যায়, তাই সামান্য কমে আসে আমিষের মান। খেয়াল রাখতে হবে, পদটি তৈরি করতে গিয়ে যদি বেশি মুচমুচে হয়ে যায় বা খুব শক্ত হয়ে যায় কিংবা বাদামি হয়ে যায়, তাহলে ডিমের আমিষের. গঠন বেশ অনেকটাই বদলে যায়। এছাড়া এই পদে ডিমের সঙ্গে যুক্ত হয় খানিকটা তেল। তবে আপনি যদি সারাদিনে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে খুব বেশি পরিমাণ তেল না খান, তাহলে এই সামান্য তেলের জন্য আপনার তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
অমলেট: ডিমের অমলেট থেকে যে আমিষ পাওয়া যায়, তা-ও একেবারে মন্দ না। তবে সেদ্ধ বা পোচ ডিমের চেয়ে আমিষের মান কিছুটা কমে যায়। কারণ, বেশ কিছুটা সময় চুলায় রেখে করতে হয় এই পদ।
অন্যান্য পদে: রান্নার সময় নানা পদেই ডিম যোগ করা হয়। তৈরি করা হয় পুডিংয়ের মতো পদ। ডিম দেওয়ার পর পদটি খুব বেশি সময় চুলায় রাখা না হলে কিংবা খুব বেশি তাপে রান্না করা না হলে এসব পদ থেকেও আপনি আমিষ পাবেন। এসব পদ পুনরায় গরম করবেন না। তাতে আমিষের গড়ন বদলে যাওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়ে। তবে পোচ বা সেদ্ধ ডিমের তুলনায় পুডিং থেকে আমিস মিলবে কম।
মাইক্রোওয়েভে ডিম: মাইক্রোওয়েভ ওভেনে জল বা তেল দিয়ে ডিমের পদ তৈরি করা যেতে পারে। এতেও ডিমের পুষ্টিমান নষ্ট হয় না, যদি খুব বেশি তাপ প্রয়োগ করা না হয় কিংবা খুব বেশি সময় ওভেনে রাখা না হয়। অল্প জল বা অল্প তেল ব্যবহার করে ঝটপট পদটি তৈরি করে নিলে পুষ্টিগুণ পাবেন ঠিকঠাক।
কাঁচা ডিম কি ভালো?
কেউ কেউ বলেন, পেশিগঠনের জন্য কাঁচা ডিম খাওয়া ভালো। তবে এ কথার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা ডিমের আমিষ মানবদেহের কাজে লাগে কম। কাঁচা ডিম খাওয়া হলে তা থেকে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে। এছাড়া কাঁচা ডিম খাওয়া হলে বায়োটিন শোষণের হারও কমে যায়। বুঝতেই পারছেন, কাঁচা ডিম খাওয়ার অভ্যাস করে আদতে খুব একটা লাভ নেই। বরং আছে ক্ষতির ঝুঁকি।
খেয়াল রাখুন: ডিমের যেকোনো পদ তৈরির ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন, যেন তা উচ্চ তাপে তৈরি করা না হয় এবং অধিক সময় চুলায় রাখা না হয়।
যেকোনো পদেই তেল ব্যবহার করুন না কেন, চেষ্টা করুন একবার ব্যবহৃত তেল পুনরায় ব্যবহার না করতে। চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদ কোনো নির্দিষ্ট কারণে ডিমের কুসুম খাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ না দিয়ে থাকলে অবশ্যই কুসুমসহ ডিম খাবেন। নইলে ডিমের আমিষ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পুরোটা পাবেন না।