যশরীরের সুস্থতার জন্য ক্যালসিয়াম (calcium) অত্যাবশ্যক এক উপাদান। বাড়ন্ত বয়সে হাড় গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে তো বটেই, প্রাপ্তবয়স্কদের সার্বিক সুস্থতার জন্যও রোজকার ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা আবশ্যক। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল হাড় সহজেই ভেঙে যেতে পারে। তৈরি হতে পারে নানা জটিলতা। বহু বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির মধ্যে সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। আর বেশি বয়সে ভাঙা হাড় সহজে জোড়াও লাগতে চায় না, ফলে জীবন হয়ে পড়ে দুর্বিষহ। তাই ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করার ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন সবারই।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম (calcium) প্রয়োজন। ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে ভালো উৎস দুধ। এছাড়া ডিমের সাদা অংশ থেকেও প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ক্যালসিয়ামের অন্যান্য উৎসের মধ্যে রয়েছে কাঁটাসহ ছোট মাছ, খেজুর, কিশমিশ, চীনাবাদাম, লালশাক, পালংশাক ও কাঁকরোল। তবে কোন্ খাবার কতটা খাওয়া হলে শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম (calcium) পাওয়া যাবে, সেটি জানাও কিন্তু জরুরি। নইলে শরীরের চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করা সম্ভব নয়।
১. দুধ ও দুধের তৈরি খাবার:-
রোজ ২২০ থেকে ২৫০ মিলিলিটার দুধ খাওয়া প্রয়োজন। চাইলে তরল দুধের পরিবর্তে এই পরিমাণ দুধ দিয়ে তৈরি কোনো খাবারও খেতে পারেন, আবার মিল্কশেক বা সুদি খেতে পারেন। তবে দুধ চা বা দুধ দেওয়া কফি খেলে কিন্তু আপনার ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হবে না। কারণ, চা বা কফির সঙ্গে ক্যালসিয়াম (calcium) মিশে গেলে ভিন্ন ধরনের যৌগ তৈরি হয়, যা আমাদের দেহের জন্য উপকারী নয়।
২. ডিম:-
বড় আকারের একটি ডিমের সাদা অংশ থেকেও আপনার রোজকার ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। তবে দেশি মুরগির ডিম খেতে চাইলে পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন। এক্ষেত্রে দুটি ডিমের সাদা অংশ খেতে হবে রোজ।
৩. খেজুর:-
ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে আপনি রোজ ছোট আকারের দুটি খেজুর খেতে পারেন। মাঝারি আকারের খেজুর হলে তা একটি খাওয়াই যথেষ্ট। এতে ক্যালসিয়াম (calcium) ছাড়াও রয়েছে পটাশিয়াম।
৪. লালশাক, পালংশাক:-
লালশাক বা পালংশাক থেকে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পেতে হলে রান্না করা শাক খেতে হবে দেড় থেকে দুই টেবিল চামচ। অন্যান্য পুষ্টি-উপাদানও পাবেন শাক থেকে।
৫. চীনাবাদাম:-
রোজ চীনাবাদাম খেতে হবে ৫০-৬০ গ্রাম, অর্থাৎ খোসা ফেলে দেওয়া বাদাম খেতে পারেন এক মুঠো। তাহলে আপনি পাবেন প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, ক্যালসিয়াম পেতে হলে বাদামের লালচে আবরণ ফেলে দেওয়া যাবে না।
৬. কাঁকরোল:-
একটা বা দেড়টা কাঁকরোল গ্রহণ করতে হবে রোজ। তাতে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হবে। তবে মনে রাখতে হবে, কাঁকরোলে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকলেও তা থেকে আপনি পাচ্ছেন অনেকটা বাড়তি শর্করা। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে কিংবা কারও ডায়াবেটিস থাকলে কাঁকরোল খুব বেশি খাওয়া উচিত না; বরং অন্যান্য উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম গ্রহণের চেষ্টা করা উচিত।
৭. কিশমিশ :-
আপনি রোজ এক চা-চামচ শুকনা কিশমিশ খেতে পারেন। তা সেটি লালচে বা কালচে যেমনই হোক। সঙ্গে একটি ছোট খেজুর আর দেড় চা-চামচ চীনাবাদাম। খোসা ফেলে দেওয়ার পর চামচে টইটম্বুর করে মেপে নিন বাদাম। অর্থাৎ চামচে খানিকটা উঁচু করে নিতে হবে বাদামটুকু।
৮. কাঁটাসমেত ছোট মাছ:-
ট্যাংরা বা মলা-ঢেলা মাছ খেলে সাত-আটটি মাছ খেতে হবে রোজ। আর কাচকি মাছ খেতে চাইলে তা খেতে হবে ১০০ গ্রাম পরিমাণ। রান্নার পর দেড় টেবিল চামচ কাচকি মাছ মোটামুটিভাবে ১০০ গ্রাম বোঝায়। কেউ কেউ কেবল উদ্ভিজ্জ খাবারই গ্রহণ করেন, এমন ক্ষেত্রে অবশ্যই উদ্ভিজ্জ উৎসের পরিমাণের দিকটা খেয়াল করতে হবে। অন্য কোনো উৎস থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ না করলে এবং উদ্ভিজ্জ খাবারও কম পরিমাণে খেলে কিন্তু ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থেকে যাবে।
অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম (calcium) গ্রহণেরও কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে, যেমন কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বা হাড়ের স্বাস্থ্যের পরিবর্তে শিরা এবং ধমনীতে ক্যালসিয়ামের জমা হওয়া। তাই, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করার সময় পরিমিত পরিমাণ বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করাও হতে পারে একটি ভালো উপায়, বিশেষ করে যাদের খাদ্যাভ্যাসে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম নেই। তবে সঠিক খাবার নির্বাচন ও পরিমাণ বজায় রেখে দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা সহজ এবং স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি।
আরো পড়ুন:- কোলেস্টেরল (Cholesterol) নিয়ন্ত্রণের উপায়: ডায়েট, ব্যায়াম ও সচেতনতা
কোন কোন ফল ও শাকসবজি Vitamin-D এর সেরা উৎস?