ঘামাচি প্রতিরোধে কৌশল: গরমে স্বাস্থ্যসম্পর্কে কিছু উপকারী পরামর্শ

অল্পস্বল্প মেঘ, জল আর ঝড়ের দেখা মিললেও চৈত্রের আবহাওয়ার মূল বৈশিষ্ট্য গরম। গ্রীষ্মের কড়া রোদের দিন তো সামনে পড়েই আছে। গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণে বাড়তি এক যন্ত্রণা ঘামাচি। তাই ঘামাচি প্রতিরোধের উপায়গুলো জেনে রাখা ভালো। আর ঘামাচি যদি হয়েই যায়, সেক্ষেত্রে কী করবেন, সেটিও জেনে নিন।

A person suffering from scabies
ঘামাচিতে আক্রান্ত ব্যক্তির পিঠ

ঘামাচি প্রতিরোধের জন্য প্রথম পরামর্শই হলো অতিরিক্ত গরম পরিবেশ এরিয়ে চলা। তবে বাস্তবতা হলো, সবসময় গরম পরিবেশ পুরোপুরি এরিয়ে চলা সম্ভব হয় না। তাই ঘামাচি প্রতিরোধের জন্য বরং ঘামের বিষয়েই বেশি সচেতন থাকা প্রয়োজন। এমনটাই বলছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা।

ঘাম ও ঘামাচি প্রতিরোধে গরমে তো ঘাম হবেই। কেউ হয়তো একটু বেশি ঘামেন, কেউ কম। ঘাম কম হোক কিংবা বেশি, সেটা আপনি কীভাবে সামলাচ্ছেন, সেটিই হলো আসল কথা।

আরও পড়ুনঃ- Dehydration: গরম কালে ডিহাইড্রেশনের প্রভাব


ঘুম থেকে উঠতেই গলা খুসখুস করে? কারণ ও প্রতিকার

শরীর ঘেমে গেলেই পরিষ্কার নরম একটি সুতি কাপড় ভিজিয়ে নিন। কাপড়টি রুমাল বা তোয়ালেও হতে পারে। ভেজা কাপড়টি দিয়ে দ্রুত ঘাম মুছে ফেলুন। শরীরের কিছু অংশ বেশি ঘামে, যেমন বগল, কুঁচকি বা গলা। ঘেমে গেলে পুরো শরীর মুছতে না পারলেও এসব জায়গা মুছে ফেলতে চেষ্টা করুন। সুতি পোশাক পরুন। ঘাম হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব পোশাক বদলে ফেলা ভালো।

রোজ সাবান দিয়ে স্নান করুন। বারবার স্নান না করলেও ক্ষতি নেই। একবার ভালোভাবে স্নান করাই যথেষ্ট।

ঘাম কমাতে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। ঘামাচি প্রতিরোধক পাউডারই ব্যবহার করতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেকোনো পাউডারই কাজে দেবে, তবে সুগন্ধবিহীন পাউডার বেছে নেওয়া ভালো। কারণ, সুগন্ধি উপকরণের কারণে কারও কারও ত্বকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ত্বকে কোনো সমস্যা না হলে সুগন্ধি পাউডার ব্যবহার করতে বাধা নেই।

বাইরে গেলে ঘাম বেশি হয়ে থাকে। তাই বের হওয়ার সময় সঙ্গে রাখুন বাড়তি রুমাল বা কাপড়। বারবার ঘামলে ত্বক মোছার পর আবার পাউডার লাগিয়ে নেওয়াও ভালো। তাই ব্যাগে ছোট কৌটা বা বাক্সে পাউডার সঙ্গে নিয়ে বের হতে পারেন। রাখতে পারেন বাড়তি পোশাকও।

ঘামাচি যদি হয়েই যায়- ঘামাচি প্রতিরোধের উপায়গুলো তো জানলেন। তারপরও যদি ঘামাচি হয়ে যায়? হলেও কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। একটু ঠান্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করতে হবে। ঘামাচি হলে যা করতে পারেন ঘামাচির জায়গাটা ঘেমে গেলে আলতো করে মুছে নিন। এক্ষেত্রে পরিষ্কার ও নরম সুতি কাপড় ভিজিয়ে নিতে হবে। পিঠে ঘামাচি হলে একাধিকবার স্নান করতে পারেন।

চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন। তবে সবাই সব ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ গ্রহণ করতে পারেন না। যেমন শ্বাসকষ্টের রোগী নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ সেবন করলে শ্বাসকষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই অ্যান্টিহিস্টামিন সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঘামাচি হওয়ার পর সেখানটায় আলাদা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ওই জায়গায় বারবার ঘষা লাগলে এরকম হতে দেখা যায়। এমন ক্ষত হলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মলম ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। তাই এরকম ক্ষত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ঘামাচি হলে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে পারেন। যন্ত্রণা খানিকটা কমবে, তবে এটি কিন্তু ঘামাচির চিকিৎসা নয়।

যারা গরম সামলাতে পারে না সেইসব ব্যক্তিদের জন্য একেবারে প্রয়োজনীয় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্য পরামর্শদাতাদের সুপারিশ মেনে চলে, যেমন পর্যাপ্ত পানি পান করা, যথাযথ খাবার গ্রহণ করা, উচিত পরিমাণে আরাম নেয়া, গরমের সময় যেন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আরো অবশ্যই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। সহজ উপায়ে গরমে প্রাণবন্তি বজায় রাখা যাবে এবং ঘামাচির প্রতিরোধে প্রভাবশালী হতে সাহায্য করবে।

Leave a Comment