তারুণ্য (youth) ধরে রাখার সঠিক উপায়
তারুণ্য (youth) সবারই আকাঙ্ক্ষিত, কিন্তু এটিকে ধরে রাখা সহজ নয়। বার্ধক্য আমাদের জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী অংশ, যা প্রায়শই শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতার সঙ্গে যুক্ত। বার্ধক্যের প্রভাব কেবল বাহ্যিক নয়, শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনও ঘটতে থাকে, যা অনেক সময় আমাদের চোখের আড়ালে থেকে যায়। তাই, ত্বকের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি নিজের শরীর ও মনের প্রতি সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক যত্ন এবং নিজেকে ভালোবাসার চর্চা তারুণ্য ধরে রাখার মূল চাবিকাঠি। বয়স বাড়ে, বার্ধক্যও আসবে, কিন্তু আমাদের উচিত বার্ধক্যজনিত জটিলতাগুলো কমিয়ে রেখে সুস্থ থাকা।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও জাপানের গবেষকদের এক যৌথ গবেষণায় তারুণ্য ধরে রাখার জন্য সঠিক খাবারের গুরুত্ব উঠে এসেছে। ‘ফ্রন্টিয়ারস ইন নিউট্রিশন’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফল অনুসারে, স্বাস্থ্যকর জাপানি খাদ্যাভ্যাস তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। এই গবেষণায় ৬৫ থেকে ৭২ বছর বয়সী ব্যক্তিদের ওপর পরীক্ষা করা হয়। একদল মানুষ পাশ্চাত্য খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে, যেখানে প্রচুর মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস, ডিম ও মেয়োনেজযুক্ত খাবার থাকে। অপর দলের খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যকর জাপানি ধারার, যাতে থাকে প্রচুর সবজি, ফলমূল, সামুদ্রিক শৈবাল আর জাপানের ঐতিহ্যবাহী ‘নাত্তো’, যা সেদ্ধ সয়াবিন দিয়ে তৈরি হয়। গবেষণার ফলাফল বলছে, যাঁরা এই জাপানি ধারার খাবার খেয়ে অভ্যস্ত. তাঁদের ওপরই বার্ধক্যের পড়েছে সবচেয়ে কম। তাই আপনি যদি সত্যিই তারুণ্য ধরে রাখতে চান, রোজকার খাদ্যতালিকায় উদ্ভিজ্জ খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন আজ থেকেই।
জাপানি নাত্তো (Natto) হলো এক ধরনের খাবার, যা সেদ্ধ সয়াবিন থেকে তৈরি করা হয়। সয়াবিনগুলোকে বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া (Bacillus subtilis) দিয়ে ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সয়াবিনগুলো নরম, আঠালো ও স্লিমি (তেলতেলে) ধরনের হয়ে যায় এবং এদের থেকে একটি শক্তিশালী গন্ধ এবং স্বাদ বের হয়। নাত্তো জাপানে খুব জনপ্রিয় এবং সাধারণত এটি সকালের নাস্তা হিসেবে ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়।
নাত্তো প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন কে২ এবং বিভিন্ন উপকারী প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ, যা হজমে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক বলে মনে করা হয়। যদিও নাত্তোর গন্ধ ও টেক্সচার অনেকের কাছে কিছুটা অপ্রিয় হতে পারে, এটি জাপানে একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে বিবেচিত।
তাহলে, আমাদের খাদ্যতালিকায় কী পরিবর্তন আনতে হবে? বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, প্রতিদিন শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার। সকালে রুটি আর আলু ভাজির পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি দিয়ে প্রাতঃরাশ শুরু করা উচিত। এতে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং শরীর থাকবে সুস্থ। দুপুর ও রাতের খাবারে প্রচুর সবজি খাওয়া দরকার। ভাত, রুটি, আলু, বিস্কুট ইত্যাদি শর্করাজাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।
মধ্যাহ্ন বিরতিতে ফলমূল খাওয়া সর্বোত্তম। চর্বি, মাখন, মেয়োনেজ এড়িয়ে চলা উচিত। ‘আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট’ অর্থাৎ তরল চর্বি যেমন মাছের তেল শরীরের জন্য উপকারী। কাঁচা স্যালাড খাওয়াও জরুরি, যা জলপাই তেল বা টক দই দিয়ে ড্রেসিং করতে পারেন।
সংক্ষেপে, বার্ধক্য প্রকৃতির অবধারিত অংশ হলেও সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। তারুণ্য ধরে রাখতে হলে স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম, এবং নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। এতে করে জীবনের প্রতিটি অধ্যায় কাটবে সুস্থ ও সুখময়।
আপনার খাদ্যতালিকায় তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্যকারী খাবার যোগ করতে চাইলে নিচের পরামর্শগুলি বিবেচনা করতে পারেন:
1. সবজি:-
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের সবজি অন্তর্ভুক্ত করুন, যেমন পালংশাক, ব্রোকলি, গাজর, মিষ্টি আলু, এবং টমেটো। এগুলো ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ।
2. ফলমূল:-
প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ফল খান, যেমন আপেল, কলা, বেরি, আঙুর এবং কমলা। ফলের মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ও ফাইবার আপনার শরীরের জন্য উপকারী।
3. মাছ ও সামুদ্রিক খাবার:-
সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মাছ খান। বিশেষ করে স্যালমন, ম্যাকারেল, এবং ট্রাউট এগুলো ‘আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট’ সমৃদ্ধ, যা আপনার হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
4. মশলাযুক্ত খাবার:-
জিরা, হলুদ, আদা, এবং রসুন আপনার মেটাবলিজম বাড়াতে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
5. মসুর ডাল ও অন্যান্য ডাল:-
ডাল প্রোটিন এবং ফাইবারের ভালো উৎস। বিভিন্ন ধরনের ডাল যেমন মসুর, চানা, ও মুগ ডাল আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
6. গরুর মাংস ও দুধের বিকল্প:-
গরুর মাংসের পরিবর্তে চর্বিহীন মাংস বা দুধের বিকল্প হিসেবে সয়া মিল্ক ব্যবহার করতে পারেন।
7. শস্যজাত খাবার:-
শ্বেত আটা পরিবর্তে খাঁটি গম, ওটস বা যব ব্যবহার করুন। এসব শস্য আপনার শরীরে ফাইবার এবং পুষ্টি যোগাবে।
8. চর্বি:-
স্বাস্থ্যকর চর্বির উৎস হিসেবে জলপাই তেল, অ্যাভোকাডো, এবং বাদাম ব্যবহার করুন। এগুলো শরীরের জন্য উপকারী চর্বি সরবরাহ করে।
9. বিভিন্ন শাক:-
সালাদে কাঁচা সবজি যেমন শসা, লেটুস, এবং ক্যাপসিকাম যোগ করুন। স্যালাডের ড্রেসিং হিসেবে জলপাই তেল বা টক দই ব্যবহার করুন।
আরও পড়ুনঃ- বর্ষার সর্দি-কাশি (cold and cough) থেকে বাঁচার সহজ ঘরোয়া উপায়
কোন কোন ফল ও শাকসবজি Vitamin-D এর সেরা উৎস?
এই খাদ্যতালিকা আপনাকে শরীরের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়ক হবে।