বর্তমান সময়ে কোলেস্টেরল (Cholesterol) নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষত যখন আমরা জানি যে উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এখন অনেকেই ঘরে বসেই কোলেস্টেরল পরীক্ষা করতে চাইছেন, এবং এর জন্য স্ব-পরীক্ষার কিটগুলো বাজারে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে, এই স্ব-পরীক্ষাগুলো কতটা নির্ভরযোগ্য এবং এগুলো ব্যবহার করার সঠিক পদ্ধতিগুলো কী?
কোলেস্টেরল কি এবং কেন নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ?
কোলেস্টেরল হল এক ধরনের চর্বি যা রক্তে পাওয়া যায়। এটি মূলত দুটি ধরনের হতে পারে:
1. এলডিএল (LDL) বা “ক্ষতিকর” কোলেস্টেরল: এটি ধমনীতে জমে রক্তপ্রবাহকে বাধা দিতে পারে।
2. এইচডিএল (HDL) বা “ভালো” কোলেস্টেরল: এটি রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলকে দূরে সরাতে সাহায্য করে।
যখন কোলেস্টেরল মাত্রা বেশি হয়ে যায়, তখন হৃদরোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত কোলেস্টেরল পরিমাপ এবং নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।
ঘরে বসে কোলেস্টেরল পরীক্ষা করার সুবিধা
স্ব-পরীক্ষার কিটের মাধ্যমে ঘরে বসে কোলেস্টেরল পরিমাপ করার সুবিধা হলো আপনি প্রায় যে কোন সময় এটি করতে পারেন এবং এর জন্য ল্যাবরেটরিতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এছাড়া এটি অনেক সময় সাশ্রয় করে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কোলেস্টেরল মাত্রা চেক করতে বেশ কার্যকর।
ঘরে কোলেস্টেরল পরিমাপের কিটের ধরন
বাজারে দুই ধরনের কোলেস্টেরল স্ব-পরীক্ষা কিট পাওয়া যায়:
1. ফিঙ্গার প্রিক কিট: এই কিটে একটি ছোট সুই ব্যবহার করে আঙুল থেকে রক্তের একটি ফোঁটা সংগ্রহ করা হয় এবং কিটের স্ট্রিপে রেখে তা পরীক্ষার মাধ্যমে ফলাফল জানা যায়।
2. ইলেকট্রনিক কিট: এই কিটের ক্ষেত্রে, রক্তের ফোঁটা সংগ্রহের পর একটি মেশিনে রাখা হয় এবং তা থেকে ডিজিটাল ফলাফল পাওয়া যায়।
কিভাবে কোলেস্টেরল পরীক্ষা করবেন
১. প্রথমে, পরিষ্কার সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং শুকিয়ে নিন।
২. কিটের নির্দেশনা অনুযায়ী আঙুলে ছোট সুই বা ল্যান্সেট দিয়ে ফোঁটা রক্ত সংগ্রহ করুন।
৩. রক্তের ফোঁটাটি নির্ধারিত স্ট্রিপে রাখুন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী মেশিন বা কিটে প্রয়োগ করুন।
৪. কয়েক মিনিটের মধ্যে ফলাফলটি দেখা যাবে।
স্ব-পরীক্ষা কি নির্ভরযোগ্য?
অনেক ক্ষেত্রে, ঘরের কিটগুলো সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য কার্যকর, কিন্তু তা সবসময় নির্ভুল নাও হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ল্যাবরেটরি পরীক্ষার তুলনায় এই স্ব-পরীক্ষার ফলাফল কখনও কখনও বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তাই, যদি স্ব-পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চ কোলেস্টেরল পাওয়া যায়, তবে নিশ্চিত হতে ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সতর্কতা এবং পরামর্শ
১. পরীক্ষার আগে: ফলাফলের সঠিকতা নিশ্চিত করতে নির্দেশাবলীর প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দিন।
২. রক্ত সংরক্ষণে সতর্কতা: রক্ত সংগ্রহে পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন।
৩. বিশ্বাসযোগ্য ব্র্যান্ড বাছাই: বিশ্বস্ত ও মানসম্পন্ন ব্র্যান্ডের কিট ব্যবহার করুন।
কবে ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন?
যদি স্ব-পরীক্ষায় কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি পাওয়া যায় এবং সাথে উচ্চ রক্তচাপ, বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার
স্ব-পরীক্ষার কিট ঘরে বসে কোলেস্টেরল চেক করার একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে, তবে এটি পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়। নিয়মিত ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সবচেয়ে নিরাপদ। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও পড়ুন: ডিম (eggs) খেলে কি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে?